
নিজস্ব প্রতিবেদক:
অত্যন্ত স্বল্প পুঁজি এবং সীমিত জায়গা ব্যবহার করে যদি লাভজনক কোনো ব্যবসায় প্রবেশ করা যায়, তবে রঙ্গিন মাছ বা অলংকারিক মাছ চাষ সেই সম্ভাবনার অন্যতম উজ্জ্বল ক্ষেত্র। শহুরে জীবনে নান্দনিকতার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অ্যাকুরিয়াম ব্যবসা ও অলংকারিক মাছের বাজারে গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।
ঢাকার বনানী, গুলশান থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা শহরের পেট শপ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গাপ্পি, মলি, প্লাটি, গোল্ডফিশ, কই কার্প ও ফুলহর্ন প্রজাতির মাছের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। শুধু দেশীয় বাজারই নয়, ভারত, মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে রপ্তানির ক্ষুদ্র পরিসরের উদ্যোগও দ্রুত লাভজনক হয়ে উঠছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতি বছর অলংকারিক মাছের চাহিদা গড়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে বাড়ছে।
উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা
কিশোরগঞ্জের এক তরুণ উদ্যোক্তা জানালেন, মাত্র ৬০ হাজার টাকার মূলধনে ১০টি ব্রিডিং ট্যাংক স্থাপন করে তিনি প্রথম মাসেই প্রায় ২৫ হাজার টাকার বিক্রি করেন। নিয়মিত যত্ন এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিক্রয় চ্যানেল ব্যবহার করে এখন তিনি মাসে ৪০–৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেট মুনাফা করছেন।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা
-
প্রাথমিক বিনিয়োগ: ৫০,০০০–৭০,000 টাকা
-
উৎপাদন সময়: ৩০–৪৫ দিন
-
প্রতি ট্যাংকের উৎপাদন: ১৫০–২০০ পিস
-
পাইকারি বিক্রয় মূল্য: প্রতি পিস ১৫–৪০ টাকা
-
গড় মাসিক নেট আয়: ২০,০০০ থেকে ৩০,000 টাকা
-
রপ্তানির ক্ষেত্রে লাভ: ৩ থেকে ৫ গুণ বেশি
সরকারি সহায়তা ও কর্মসংস্থান
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় রঙ্গিন মাছ চাষের ওপর স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ ও ঋণ সুবিধার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই খাতে সুদমুক্ত ঋণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিশ্চিত করা গেলে হাজারো বেকার যুবকের জন্য আয়ের নতুন দরজা খুলবে।
চ্যালেঞ্জ
-
পানির গুণগত মান রক্ষা ও অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা
-
রোগ প্রতিরোধে ব্রিডিং মাছ আলাদা রাখা
-
বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে একাধিক বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা
-
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার ক্ষেত্রে ছোট ব্যাকআপ সিস্টেম সরবরাহ
সামগ্রিক মূল্যায়ন
বিশেষজ্ঞদের মতে, রঙ্গিন মাছ চাষ শুধুমাত্র শখ নয়, বরং এটি একটি টেকসই মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজ মডেল, যা খুব কম সময়ে নগদ আয়ে পরিণত হয় এবং দেশীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্ভাবনাও সৃষ্টি করে।